ডায়াবেটিস একটি গুরুতর সমস্যা যার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিকার নেই। নিয়ন্ত্রণে রেখেই সুস্থ জীবন যাপন করা যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার বৃদ্ধির লক্ষণগুলি অনুভব করা ছাড়াও, সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা হ’ল হাত ও পায়ে ব্যথা। ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়ই এটি সম্পর্কে অভিযোগ করে।
হাত পায়ে ব্যথা কোনো রোগ, আঘাত বা বাতের উপসর্গ হতে পারে, কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে হরমোন ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে বা অপর্যাপ্ত উৎপাদনের কারণে এটি হয়ে থাকে। কারণ এই হরমোনের অভাব সরাসরি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা জয়েন্টকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস হল রক্তে অতিরিক্ত চিনির পরিমাণ। ইনসুলিনের কাজ ব্যাহত হলে এই সমস্যা দেখা দেয়। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় দ্বারা তৈরি একটি হরমোন। ইনসুলিন গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে। একই সময়ে, যখন এর কার্যকারিতা ব্যাহত হয়।
তখন শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার পরিবর্তে, গ্লুকোজ রক্তে স্থির হয়ে যায় এবং যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, তখন ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে যদি সময়মতো ডায়াবেটিস কমানোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ডায়াবেটিসের কারণে হার্ট, কিডনি, চোখ, স্নায়ু এবং ত্বক সংক্রান্ত অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
যখন আমরা আমাদের শরীরে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখতে শুরু করি, তখন আমাদের অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে-
১) ঘন ঘন তৃষ্ণা।
২) ক্ষুধা বৃদ্ধি।
৩) হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস।
৪) ক্লান্ত এবং দুর্বল বোধ।
৫) ক্ষত নিরাময় না হওয়া।
৬) ফোঁড়া ফেটে যাওয়া।
৭) ঝাপসা দৃষ্টি।
৮) দাঁতের রোগ।
৯) হাত ও পায়ে শিহরণ বা অসাড়তা।
১০) পায়ে এবং হাঁটুতে ব্যথা।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, বাতের ৪৭ শতাংশ লোকেরও ডায়াবেটিস রয়েছে। ডায়াবেটিসে জয়েন্টের ক্ষতি হয়, এই অবস্থাকে ডায়াবেটিক আর্থ্রোপ্যাথি বলা হয়। হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। আপনি এর জন্য অনেক সহজ সমাধান চেষ্টা করতে পারেন।
স্ট্রেচিং ব্যায়াম করা
স্ট্রেচিং শুধুমাত্র হাত এবং পায়ের ব্যথা উপশম করে না, তবে পেশীগুলিকে টোন করতেও সাহায্য করে। এর জন্য আপনি অনেক ধরনের স্ট্রেচিং ব্যায়াম করতে পারেন। ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে প্রতিদিন সকালে স্ট্রেচিং শরীরের আরও উপকার করতে পারে। এ জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন কীভাবে, কতক্ষণ এবং কখন করা উচিত।
আরও দেখুন>>>
- রসুনের উপকারিতা ও ব্যবহার (রসুন খাওয়ার সঠিক সময় ও সঠিক উপায়)
- এলাচ খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়? গুণাগুণ ও ক্ষতি বিস্তারিত দেখুন
- যৌন শক্তি বাড়ানোর সহজ উপায়
ঠান্ডা এবং গরম থেরাপি
জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আপনি গরম এবং ঠান্ডা থেরাপি ব্যবহার করতে পারেন। যখন এটি ঘটে, আপনি ১০-১৫ মিনিটের জন্য জয়েন্টগুলোতে বরফ রাখতে পারেন। এটি ফোলা কমাতে পারে বা আপনি একটি হিট প্যাডও ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যারোবিক ব্যায়ামও উপকারী
হাঁটা বা সাঁতারের মতো অ্যারোবিক ব্যায়াম সাধারণত নিতম্ব এবং হাঁটুর কার্যকারিতা উন্নত করে। সাঁতার ব্যায়াম এছাড়াও জয়েন্টের ব্যথা অধিকাংশ মানুষের জন্য খুব কার্যকরী। এ ছাড়া সাইকেলও চালাতে পারেন। আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শে কিছু সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। আপনি গ্লুকোসামিন, কনড্রয়েটিন, ভিটামিন ডি এবং ওমেগা -৩ মাছের তেল ব্যবহার করতে পারেন। তারা জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
ধূমপান এড়িয়ে চলুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান
আপনি যদি ডায়াবেটিক রোগী হন এবং আপনি ধূমপান করেন, তাহলে অবিলম্বে আপনার এটি সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ধূমপান টিস্যুগুলিকে প্রভাবিত করে, আরও ব্যথা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনযুক্ত জিনিস খাওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীরাও আজকাল কম বয়সী হচ্ছে, যার প্রধান কারণ ভুল খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা। এই রোগের কারণে একজন ব্যক্তিকে ক্রমাগত তার সুগার লেভেল পরীক্ষা করতে হয় এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। কিছু ঘরোয়া প্রতিকার এক্ষেত্রে দারুণ সাহায্য করতে পারে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের খাওয়ার ধরন পরিবর্তন করতে হবে।
সবুজ চা, করলা, জাম, তুলসী, ডুমুর পাতা, মেথি, দারুচিনি গুঁড়া ইত্যাদি খাবারে আমাদের অনেক ধরনের জিনিস অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। চিনি পরিহার করার জন্য ব্যায়ামও প্রয়োজন।
এখানে আমরা কিছু উপকারী খাবার সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি যা সুগার রোগীদের জন্য কার্যকরী প্রমাণিত হবে। তো চলুন দেখি এগুলো কি!
1.) নিম
নিম খুবই কার্যকরী একটি ওষুধ। এর পাতা ও বাকল দুটোই ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ। নিম পাতা পিষে তার রস তৈরি করে পান করুন অথবা সকাল-সন্ধ্যা দু-তিনটি পাতা খান।
2.) সবুজ চা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও গ্রিন টি উপকারী প্রমাণিত হয়। যাদের চা খাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের গ্রিন টি পান করা শুরু করা উচিত। এটি কোলেস্টেরলও কমায়। সবুজ চায়ে চিনি বা মধু ব্যবহার করা উচিত নয়।
3.) করলা
করলা খেতে তেতো হলেও এর উপকারিতা অমূল্য। বেশিরভাগ মানুষ এটি খেতে একেবারেই পছন্দ করেন না তবে এটি উপকারী। করলা আমাদের শরীরে উৎপন্ন অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সকালে খালি পেটে করলার রস খাওয়া খুবই উপকারী।
4.) জামুন
জামুনের বীজ শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে খেলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর পাশাপাশি জামুনের রস খেলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
5.) তুলসী
তুলসি গাছের পাতা ওষুধও ব্যবহৃত হয়। চায়ে তুলসী পাতা খেলে কাশিতে উপশম হয়। সকালে তুলসী পাতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
6.) মেথি
রান্নায় শুকনো মশলা হিসেবে মেথি ব্যবহার করা হলেও ডায়াবেটিসের চিকিৎসায়ও মেথি খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মেথিকে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে এর পানি পান করতে হবে।
ডায়াবেটিসে কি খাবেন না
1.) সাদা রুটি
হোয়াইট ব্রেড বা সাদা পাস্তায় উচ্চ পরিমাণে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা আমাদের রক্তে পৌঁছে সুগার বা চিনির মাত্রা বাড়ায়।
2.) সাদা চাল বা ভাত
চালে আঁশের পরিমাণ কম থাকে। এর পাশাপাশি এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, যার কারণে এটি সহজে হজম হয় এবং পরিমাণে গ্লুকোজ তৈরি করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।
আরও দেখুন>>>
- স্পার্ম কাউন্ট কেন কম হয়? এর কারন গুলো জেনে নিন
- জিম ছাড়া মাত্র ১৫ দিনে কিভাবে শরীর বাড়ানো যায় দেখে নিন
- ঘরে বসে সাদা চুল কালো করার উপায়
3.) আলু
আলু থেকে তৈরি খাবারে উচ্চ পরিমাণে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে যা চিনির মাত্রা বাড়ায়।
4.) ফলের রস
ফলের রসে মিস্টি থাকে যা রক্তে শর্করা বাড়ায়। এটি শুধুমাত্র লো ব্লাড সুগারে উপকারী।
5.) রেডমিট
লাল মাংসে অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
6.) দুধ
ডায়াবেটিস রোগীর দুধ পান করা উচিত নয়।
7.) কোমল পানীয়
কোমল পানীয় গ্রহণ করা খুব বিপজ্জনক হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের কখনই এটি খাওয়া উচিত নয়।
8.) সুগার ফ্রি কিউব
মানুষ বিশ্বাস করে যে কৃত্রিম সুইটনার সুগার রোগীর জন্য ভালো কিন্তু তা ঠিক নয়। এই পরিহার করা উচিত।
9.) জাঙ্ক ফুড
ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড একেবারেই খাওয়া উচিত নয়।
বন্ধুরা ডায়াবেটিস রোগীদের জয়েন্টে ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার গুলো জানুন এই পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে? আশা করি ডায়াবেটিস সম্পর্কে সকল তথ্য দিতে পেরেছি। পোস্টটি যদি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার, ইন্সটাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করতে ভুলবেন না। পরবর্তীতে কোন বিষয়ে পোষ্ট দেখতে চান তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদেরকে নিত্য নতুন পোষ্ট লিখতে উৎসাহিত করে।