স্পার্ম কাউন্ট কেন কম হয়? এর কারন গুলো জেনে নিন

আজকাল পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব বেড়েই চলেছে। কম স্পার্ম কাউন্টের কয়েকটি প্রধান কারন অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, স্ট্রেস এবং অনুপযুক্ত ডায়েট। গর্ভবতী না হওয়ার কিছু কারন থাকে, তার মধ্যে অন্যতম কারন হচ্ছে পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট কম থাকা। ১০ জনের মধ্যে ১ জন দম্পতি ফার্টিলিটি সমস্যায় ভোগেন , এর প্রধান কারন হল পুরুষদের মধ্যে কম স্পার্ম কাউন্ট থাকা। বিভিন্ন গবেষণায় এটি জানা যায়। এই তথ্য অনুসারে আমরা জানতে পারি, গর্ভধারণের জন্য পুরুষ সঙ্গীকে কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন শুক্রানু ছাড়তে হয় প্রতি বীর্যপাতে।

অনেক পুরুষই এই সমস্যায় ভুগছেন। অনুপযুক্ত জীবনধারাই হল স্পার্ম কাউন্ট কম হওয়ার মুল কারন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটি বা কিছু অসুস্থতা শুক্রানু উৎপাদনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এটি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ব্যতীত অন্য কিছু নয়, যা আজকাল পুরুষদের পুরুষত্বহীন বা অক্ষম ক তুলছে।

আজকে এই নিবন্ধনে, আমরা এমন কিছু সাধারন বিষয়ের দিকে নজর দিবো যেগুলি বিভিন্ন চিকিৎসার কারন ছারাও পুরুষের মধ্যে কম স্পার্ম কাউন্টের সমস্যা তৈরি করে। দেখে নিন সেগুলি কি কি……

স্পার্ম কাউন্ট কেন কম হয়? এর কারন গুলো জেনে নিন

স্থুলতা 
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য স্থূলত্বের সম্ভাবনা সর্বদা বেশি থাকে। অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাই স্থুলতার সাথে জড়িত এবং এর মধ্যে একটি সমস্যা হল যৌন গ্রন্থির দুর্বল ক্রিয়াকলাপ। মহিলাদের মধ্যে স্থূলত্ব, হরমোন (ইস্ট্রোজেন) বৃদ্ধির সাথে জড়িত এবং পুরুষদের মধ্যে এটি কম স্পার্ম কাউন্টের সাথে যুক্ত হয়েছে।

অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন

বিভিন্ন গবেষণাতেই বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত অ্যালকোহলের অপব্যবহার বন্ধ্যাত্বের কারন। মদ্যপান পুরুষত্বহীনতার সৃষ্টি করতে পারে এবং শুক্রাণুর গুনগতমানকে প্রভাবিত করতে পারে কারন, অ্যালকোহল শরীরকে দস্তা শোষণে বাধা দেয় যা, শুক্রাণু কোষ গঠনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ।

ড্রাগ ব্যবহার করা 
আমরা সকলেই জানি ড্রাগ নেওয়া সাস্থের জন্য মারাত্তক ক্ষতিকর। ড্রাগ নিলে যে শুধু স্পার্ম কাউন্ট কম হয় তা নয়। ড্রাগ আপনার শরীরে সকল দিক দিয়ে ক্ষতি করে। বিভিন্ন গবেষনায় বলা হয়েছে, ড্রাগের অপব্যবহারের জন্য স্পার্ম কাউন্ট কম  হয়। একটি সমীক্ষার মধ্যমে প্রমানীত হয়েছে যে, মাদক সেবনকারী প্রায় ৩৩ শতাংশ পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট কম হয়।

ডায়াবেটিস 
আমরা সকলেই জানি ডায়াবেটিস সাধারণত ২ প্রকার। টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস। টাইপ ২ ডায়াবেটিস যা প্রায়ই অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার কারণে ঘটে এবং এটি স্পার্ম কাউন্ট কম হওয়ার প্রধান একটি কারন।

সয়া প্রোডাক্ট 
গবেষনায় বিশেষ ভাবে প্রমাণ দেয় যে, নিয়মিত সয়া প্রোডাক্ট গ্রহণকারী পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট কম হয়ে থাকে। এতে দৃঢ়ভাবে বলা হয়েছে যে, সয়াজাতীয় পণ্যগুলির আইসোফ্লাভোনস্ স্পার্ম কাউন্ট কমিয়ে আনতে পারে।  তাই সয়াজাতীয় কম গ্রহন করার চেস্টা করবেন।

গরম পানিদিয়ে গোসল 

যদিও এই কথাটি হাসকর শোনায়, তবে এটা ১০০ ভাগ সত্যি। অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করা স্পার্ম কাউন্ট কমাতে সাহায্য করে। যৌনাঙ্গের তাপমাত্রা যদি ৯৮ ডিগ্রির উপরে উঠে যায় তবে এটি আসতে আসতে স্পার্ম কাউন্ট কমিয়ে দিতে থাকে।

স্টেরয়েড
আমদের শরিরে পেশি তৈরি করতে বিভিন্ন উপায়ে স্টেরয়েড সাহায্য করে থাকে এবং আপনার প্রজনন সাস্থকে প্রভাবিত করে। এর ফলে যৌনাঙ্গ সংকুচিত হয় এবং স্পার্ম কাউন্ট কম হয়।

মানসিক চাপ 
পুরুষদের মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত উত্তেজনাই হলো স্পার্ম কাউন্ট কম হওয়ার সাধারন কারন। তীব্র মানসিক চাপ আপনার স্পার্ম কাউন্টকে প্রভাবিত করে। এক বিশেষ গবেষণায় যানা যায় যে, মানসিক চাপ শুক্রাণু এবং বির্যের জন্য ক্ষতিকারক।

মোবাইল ফোন
মোবাইল ফোন ব্যাবহার করেনা এমন মানুষ এখন খুব কম দেখা যায়, কিন্তু আমরা জানি না যে মোবাইল ফোন আমাদের শরিরের কতটা ক্ষতি করে। একটি বিশেষ গবেষণায় যানা যায়, যে সকল পুরুষেরা ৪ ঘন্টারো বেশি সময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যাবহার করে তাদের মধ্যে সাধারন মানুষদের তুলনায় স্পার্ম কাউন্ট হয়ে যায়।

পুরুষেরা তাদের পেন্টের পকেটে মোবাইল ফোন বহন করে যা, শুক্রাণু গণনায় অনেক বর প্রভাব ফেলে। সুতরাং যারা অতিরিক্ত মাত্রায় মোবাইল ব্যাবহার করেন তারা এই বিষয়টি মাথায় রেখে মোবাইল ফোন ব্যাবহার করবেন।

স্পার্ম কাউন্ট বাড়ানোর উপায়

স্পার্ম কাউন্ট বাড়ানোর উপায়

শুক্রাণু বাড়ানোর জন্যরানরঃ- রসুনের তীব্র গন্ধে আপনার যদি কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে এটি খাওয়া শুরু করুন। এটিতে দুটি জাদুকরী পদার্থ রয়েছে – প্রথমটি হল অ্যালিসিন, যা পুরুষদের যৌন অঙ্গে রক্ত ​​​​প্রবাহ বাড়ায় এবং শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং দ্বিতীয়টি সেলেনিয়াম – এটি এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শুক্রাণুর গতিশীলতা বাড়ায়। প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খেলেই যথেষ্ট।

কলাঃ- পুরুষদের লিঙ্গের মতো দেখতে কলা, এই ফলটি তাদের যৌন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কলায় ব্রোমেলেন নামক একটি এনজাইম পাওয়া যায়, যা পুরুষদের শুক্রাণু বাড়াতে এবং যৌন হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ এবং বি১ পাওয়া যায়, যা পুরুষদের শরীরে শুক্রাণু তৈরির ক্ষমতা বাড়ায়।

পালং শাকঃ- পালং শাকে ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা শুক্রাণুর জন্য অপরিহার্য পুষ্টি। এটি সুস্থ শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে। শরীরে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি হলে অস্বাস্থ্যকর শুক্রাণু বৃদ্ধি পায়। যার কারণে ডিম্বাণু পর্যন্ত শুক্রাণু পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে।

অন্যান্য ঘরোয়া প্রতিকার

১- চার-পাঁচটি বাদাম সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, সকালে পিষে ভালো করে পেস্ট তৈরি করুন এবং এক দুধ ফুটিয়ে নিন। সাথে এক চামচ দেশি ঘি এবং চিনি মিশিয়ে পান করুন।
২- পাঁচটি বাদামের পেস্টে এক গ্রাম এলাচের বীজ, ১০ গ্রাম চিনি মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন।
৩- প্রতিদিন আধা গ্রাম জায়ফল গুঁড়ো পানির সাথে খান।
৪- অ্যাসপারাগাস, অশ্বগন্ধা এবং নিরাপদ মুসলি মিশিয়ে পাউডার তৈরি করুন। তিন গ্রাম এই মিশ্রণ সকাল-সন্ধ্যা এক গ্লাস দুধের সঙ্গে খান।
৫. এক চামচ মধুতে সমপরিমাণ পেঁয়াজের রস ও আদার রস মিশিয়ে পান করুন। অনেক উপকার হবে।

এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন

১- শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে যোগব্যায়ামের সাহায্য নিন। নিয়মিত ব্যায়াম শরীর ভাল রাখে এবং শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে।
২- মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন। সব সময় চাপের মধ্যে থাকা শুক্রাণুর সংখ্যা এবং তাদের গুণমানকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে।
৩- অ্যালকোহল এবং সিগারেট খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
৪- টাইট প্যান্ট পরবেন না। রাতে জিন্স পরে ঘুমাবেন না। ঢিলেঢালা কাপড় পরে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
৫- ল্যাপটপ উরুতে রেখে কাজ করবেন না।
৬- মোবাইল সবসময় প্যান্টের পকেটে রাখবেন না।
৭- অতিরিক্ত লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করবেন না। এটি শুক্রাণুকে মেরে ফেলতে পারে।
৮- সয়া দুধ খাবেন না, কারণ এটি শুক্রাণুর ক্ষতি করে।
৯- একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে পুরুষরা প্রতিদিন তিন বা তার বেশি কাপ কফি খান, তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গুণমান কম থাকে। তাই অতিরিক্ত চা বা কফি পান এড়িয়ে চলুন।

উপসংহারঃ 
বন্ধুরা আমাদের আজকের পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে? আশা করি স্পার্ম কাউন্ট কেন কম হয়? এর কারন গুলো আপনারা বুঝতে পেরেছেন। আমাদের এই পোস্টটি যদি ভাললেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। পরবর্তীতে কোন বিষয়ে পোস্ট দেখতে চান তা আমদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের নিত্য নতুন পোষ্ট লিখতে উৎসাহিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *